বাংলাদেশে ঋণ বা লোনের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অর্থের প্রয়োজন মেটাতে ঋণ নেয়। বাড়ি নির্মাণ, শিক্ষা, ব্যবসা পরিচালনা, চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি কারণে ব্যাংক ঋণ অনেক মানুষের জন্য এক প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা। তবে, ঋণ গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর সুদের হার। সুদের পরিমাণ যদি বেশি হয়, তবে ঋণ পরিশোধের চাপও অনেক বেশি হতে পারে। এজন্য বেশিরভাগ মানুষ খোঁজে এমন ব্যাংক যেগুলো কম সুদে ঋণ প্রদান করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বাড়ি কেনা, ব্যবসা সম্প্রসারণ বা ব্যক্তিগত খরচের জন্য ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সময় সুদের হার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুদের হার যত কম হবে, ঋণের উপর অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের বোঝাও তত কম হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক?
এই ব্লগ পোস্টে, আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো কীভাবে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করে এবং কোন ব্যাংকগুলোতে আপনি কম সুদের হারে লোন পেতে পারেন। এছাড়া, ঋণ নেওয়ার আগে কী কী বিষয় খেয়াল রাখা উচিত, তারও বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে।
সুদের হার কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
সুদের হার কী?
সুদের হার হল সেই পরিমাণ অর্থ যা ঋণগ্রহীতাকে ঋণ প্রদানের জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হয়, এটি সাধারণত একটি শতাংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়। সহজভাবে বললে, সুদের হার হচ্ছে ঋণের মূল পরিমাণের (প্রিন্সিপাল) উপর অতিরিক্ত অর্থ, যা ঋণগ্রহীতা এক বা একাধিক কিস্তিতে পরিশোধ করে।
এটি দুই ধরনের হতে পারে:
- ফিক্সড রেট (Fixed Rate): এখানে সুদের হার ঋণের পুরো মেয়াদ জুড়ে একই থাকে।
- ভ্যারিয়েবল রেট (Variable Rate): এখানে সুদের হার সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, অর্থাৎ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী সুদের হার বাড়াতে বা কমাতে পারে।
কেন সুদের হার গুরুত্বপূর্ণ?
সুদের হার ঋণ গ্রহণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ এটি সরাসরি ঋণের মোট পরিশোধযোগ্য পরিমাণের সাথে সম্পর্কিত। সুদের হার যদি বেশি হয়, তবে ঋণগ্রহীতাকে মূল ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি অনেক বেশি অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়। এর ফলে ঋণগ্রহীতার উপর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, কম সুদের হারে ঋণ নেওয়া সম্ভব হলে, ঋণ পরিশোধ সহজ হয় এবং মোট খরচ কম হয়।
এছাড়া, সুদের হার গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরও কয়েকটি কারণ:
- ঋণের পরিমাণের উপর প্রভাব: সুদের হার যদি বেশি হয়, তবে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যেহেতু সময়ের সাথে সাথে সুদ বেশি জমা হয়।
- মেয়াদ অনুযায়ী সুদের প্রভাব: দীর্ঘ মেয়াদী ঋণে বেশি সুদ পড়তে পারে। তবে, কম সুদে ঋণ পেলে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণও সহজে পরিশোধ করা যায়।
- ঋণগ্রহীতার আর্থিক চাপ: উচ্চ সুদের হার হলে ঋণগ্রহীতা বেশি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করে, যা তার মাসিক বাজেটে চাপ তৈরি করতে পারে।
- কিস্তির পরিমাণ: কম সুদের হার মানে কিস্তি পরিমাণ কম হওয়া, যা ঋণগ্রহীতার মাসিক আয়ের উপর কম চাপ সৃষ্টি করে।
- কর্মকেন্দ্রিক সুবিধা: কম সুদের হারে ঋণ পেলে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভের পরিমাণ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, কারণ কম সুদে ঋণ নিতে পারলে তাদের ঋণ পরিশোধের চাপ কম থাকে।
এই কারণে, ঋণগ্রহীতাদের জন্য কম সুদের হার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের আর্থিক জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশে প্রচলিত প্রধান ব্যাংকগুলোর সুদের হার
বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার নির্ধারণ করে তাদের নীতি ও বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। সাধারণত সুদের হার বিভিন্ন ধরনের ঋণের জন্য আলাদা হতে পারে, যেমন পার্সোনাল লোন, হোম লোন, ব্যবসায়িক লোন ইত্যাদি। প্রতিটি ব্যাংকের সুদের হার নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে, যেমন ঋণের মেয়াদ, ঋণের পরিমাণ, ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা এবং ব্যাংকের নিজস্ব নীতি।
নিচে বাংলাদেশের কিছু প্রধান ব্যাংকগুলোর সাধারণ সুদের হার দেওয়া হলো। তবে, এই হারগুলি ব্যাংকগুলোর নির্দিষ্ট অফার এবং বাজার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।
১. সোনালী ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ৯% – ১২%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১৩%
২. জনতা ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১০% – ১৪%
- হোম লোন: ৯% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৪%
৩. রূপালী ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ৯% – ১১%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ৯% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১২%
৪. ডাচ-বাংলা ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১১% – ১৩%
- হোম লোন: ৯% – ১২%
- অটোমোবাইল লোন: ১১% – ১৩%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৫%
৫. ব্র্যাক ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১২% – ১৩%
- হোম লোন: ৯% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১১% – ১২%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৪%
৬. এফডিআই (Foreign Direct Investment) ব্যাংক (যেমন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড)
- পার্সোনাল লোন: ১৩% – ১৫%
- হোম লোন: ৯% – ১১%
- অটোমোবাইল লোন: ১২% – ১৩%
- ব্যবসায়িক লোন: ১১% – ১৪%
৭. সিটি ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১১% – ১৩%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১১% – ১৩%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৪%
৮. প্রগতি ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১১% – ১৪%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১২%
৯. আইডিএলসি ফাইন্যান্স
- পার্সোনাল লোন: ১৩% – ১৫%
- হোম লোন: ৯% – ১১%
- অটোমোবাইল লোন: ১১% – ১২%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৪%
নোট:
- এই সুদের হারগুলো গাইডলাইন হিসেবে দেওয়া হয়েছে এবং ব্যাংকগুলোর অফার বা ক্যাম্পেইন অনুযায়ী এটি পরিবর্তিত হতে পারে। তাই ঋণ নেওয়ার আগে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে বর্তমান সুদের হার এবং শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরি।
- সুদের হার কেবল ঋণের পরিমাণ ও মেয়াদে নির্ভর করে না, ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, জামানত এবং অন্যান্য আর্থিক শর্তাবলীর ওপরও এর প্রভাব পড়ে।
এভাবে বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হারের তুলনা করলে, আপনি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যাংকটি নির্বাচন করতে পারবেন।
বিভিন্ন ধরনের ঋণের সুদের হার
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলিতে বিভিন্ন ধরনের ঋণ পাওয়া যায় এবং প্রত্যেক ধরনের ঋণের সুদের হার আলাদা হতে পারে। ঋণের ধরন, পরিমাণ, মেয়াদ এবং ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের ঋণের জন্য সাধারণত প্রচলিত সুদের হার তুলে ধরা হলো।
১. পার্সোনাল লোন (Personal Loan)
পার্সোনাল লোন হচ্ছে এমন একটি ঋণ যা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য নেওয়া হয়, যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা, ঘর সংস্কার, ভ্রমণ ইত্যাদি। এই ঋণ সাধারণত জামানতবিহীন এবং অল্প সময়ের মধ্যে পরিশোধযোগ্য।
- সুদের হার: ১১% – ১৬%
- মেয়াদ: ১-৫ বছর
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: জামানত ছাড়া পাওয়া যায়, তবে সুদের হার তুলনামূলক বেশি হতে পারে।
২. হোম লোন (Home Loan)
হোম লোন, যা মাকান লোন হিসেবেও পরিচিত, একটি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ যা বাড়ি কেনা বা নির্মাণের জন্য প্রদান করা হয়। এই ঋণের উপর সুদের হার সাধারণত কম থাকে কারণ এটি জামানতসহ ঋণ (বাড়ি বা জমি) হয়ে থাকে।
- সুদের হার: ৮% – ১১%
- মেয়াদ: ৫-২৫ বছর
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, কম সুদের হার, বাড়ি বা জমি জামানত হিসেবে প্রদান করা হয়।
৩. অটোমোবাইল লোন (Car Loan)
অটোমোবাইল লোন, গাড়ি কেনার জন্য প্রদান করা ঋণ। এই ঋণও জামানতসহ হয় এবং সাধারণত কম সুদের হারে পাওয়া যায়।
- সুদের হার: ৯% – ১৪%
- মেয়াদ: ১-৭ বছর
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: গাড়ি জামানত হিসেবে রাখা হয়, ঋণগ্রহীতা সাধারণত নতুন বা ব্যবহারকৃত গাড়ি কিনতে পারে।
৪. শিক্ষা ঋণ (Education Loan)
শিক্ষা ঋণ এমন একটি ঋণ যা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা খরচ মেটানোর জন্য দেওয়া হয়। এটি ছাত্রদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ হতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে পরিশোধযোগ্য হয়।
- সুদের হার: ১০% – ১৫%
- মেয়াদ: ৫-১০ বছর (যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে হয়)
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা, জামানত ছাড়াই ঋণ পাওয়া যায়।
৫. ব্যবসায়িক ঋণ (Business Loan)
ব্যবসায়িক ঋণ ব্যবসার প্রসার, মেশিনারিজ কেনা, পরিচালনা খরচ বা অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য প্রদান করা হয়। এর সুদের হার ঋণগ্রহীতার ব্যবসায়ের প্রকৃতি এবং পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে।
- সুদের হার: ১১% – ১৫%
- মেয়াদ: ১-৫ বছর
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য জামানত, ব্যাংক এই ঋণ পেলে ব্যবসার আয় এবং সক্ষমতার ওপর নজর রাখে।
৬. মাইক্রোফাইন্যান্স লোন (Microfinance Loan)
মাইক্রোফাইন্যান্স ঋণ সাধারণত ছোট ব্যবসায়ী, দরিদ্র জনগণের জন্য দেওয়া হয়, যারা বড় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণে সক্ষম নয়। এসব ঋণের সুদের হার সাধারণত কিছুটা বেশি হয়, তবে ঋণের পরিমাণ ছোট এবং সেবা সহজলভ্য।
- সুদের হার: ১৫% – ২২%
- মেয়াদ: ৬ মাস – ৩ বছর
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: ছোট ঋণ, সাধারণত জামানত ছাড়াই পাওয়া যায়, এবং দ্রুত পরিশোধযোগ্য হয়।
৭. ক্রেডিট কার্ড লোন (Credit Card Loan)
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে ঋণ নেওয়া হয় তা সাধারণত অল্প সময়ের জন্য দেওয়া হয় এবং ঋণগ্রহীতা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে।
- সুদের হার: ১৮% – ৩০%
- মেয়াদ: মাসিক শোধের ভিত্তিতে
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: দ্রুত পাওয়া যায়, তবে সুদের হার অনেক বেশি হতে পারে, বিলম্বিত পরিশোধে অধিক সুদ।
৮. ডিপোজিটরি লোন (Deposit Loan)
ডিপোজিটরি ঋণ সাধারণত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, এবং এই ঋণটি কম সুদের হারে প্রাপ্ত হয়।
- সুদের হার: ৮% – ১১%
- মেয়াদ: ১-৩ বছর
- বিশেষ বৈশিষ্ট্য: একাউন্টে ফিক্সড ডিপোজিট রাখার মাধ্যমে লোন নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের ঋণ অফার করে থাকে এবং প্রতিটি ঋণের জন্য সুদের হার আলাদা হয়। সাধারণত, জামানতবিহীন ঋণের সুদের হার বেশি হয়, whereas জামানতযুক্ত ঋণের সুদের হার তুলনামূলক কম থাকে। ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার, শর্তাবলী, এবং ঋণের পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে নেওয়া উচিত।
কম সুদের লোন অফার করা ব্যাংকগুলো
বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক রয়েছে, যেগুলো ঋণের উপর কম সুদের হার অফার করে থাকে, বিশেষ করে যদি ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে থাকে। সাধারণত, হোম লোন, পার্সোনাল লোন এবং ব্যবসায়িক লোনের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক কম সুদের হার প্রদান করে থাকে। এখানে বাংলাদেশের কিছু প্রধান ব্যাংকের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো কম সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে।
১. সোনালী ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ৯% – ১২%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১৩%
- বিশেষ সুবিধা: সোনালী ব্যাংক বিভিন্ন সময় কম সুদের ঋণ অফার করে, বিশেষ করে সরকারি কর্মচারী এবং গ্রাহকদের জন্য। তাদের ঋণপরিশোধের সময়কালও ফ্লেক্সিবল হয়, যা গ্রাহকদের জন্য সুবিধাজনক।
২. জনতা ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১০% – ১৪%
- হোম লোন: ৯% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৪%
- বিশেষ সুবিধা: জনতা ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের কম সুদের হোম লোন এবং পার্সোনাল লোন অফার করে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ঋণগ্রহীতাদের জন্য।
৩. প্রগতি ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১১% – ১৪%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১২%
- বিশেষ সুবিধা: প্রগতি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য কম সুদের হোম লোন এবং ব্যবসায়িক ঋণ প্রদান করে, বিশেষত প্রাথমিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য।
৪. ব্র্যাক ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১২% – ১৩%
- হোম লোন: ৯% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১১% – ১২%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৪%
- বিশেষ সুবিধা: ব্র্যাক ব্যাংক কম সুদে পার্সোনাল লোন ও হোম লোন প্রদান করে এবং প্রাথমিক ব্যবসার জন্য সহজ শর্তে ঋণ পেতে সহায়তা করে।
৫. ঢাকা ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১১% – ১৪%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ৯% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১২%
- বিশেষ সুবিধা: ঢাকা ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য হোম লোনে কম সুদের হার অফার করে এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদও তুলনামূলক বেশি।
৬. সিটি ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১১% – ১৩%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১২%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৪%
- বিশেষ সুবিধা: সিটি ব্যাংক কম সুদে হোম লোন এবং পার্সোনাল লোন প্রদান করে এবং তাদের ঋণের শর্তাবলী যথেষ্ট নমনীয় হয়।
৭. স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১৩% – ১৫%
- হোম লোন: ৯% – ১১%
- অটোমোবাইল লোন: ১২% – ১৩%
- ব্যবসায়িক লোন: ১১% – ১৩%
- বিশেষ সুবিধা: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সাধারণত বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কম সুদের হোম লোন এবং ব্যবসায়িক ঋণ অফার করে।
৮. ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (EBL)
- পার্সোনাল লোন: ১২% – ১৪%
- হোম লোন: ৮% – ৯%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১২%
- বিশেষ সুবিধা: EBL গ্রাহকদের কম সুদের হার দিয়ে হোম লোন এবং পার্সোনাল লোন প্রদান করে এবং তাদের ঋণপরিশোধের শর্তাবলী সাশ্রয়ী।
৯. রূপালী ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ৯% – ১১%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ১০% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১০% – ১২%
- বিশেষ সুবিধা: রূপালী ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য কম সুদের হোম লোন এবং পার্সোনাল লোন প্রদান করে, এবং ছোট ব্যবসায়ের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ।
১০. ডাচ-বাংলা ব্যাংক
- পার্সোনাল লোন: ১০% – ১২%
- হোম লোন: ৮% – ১০%
- অটোমোবাইল লোন: ৯% – ১১%
- ব্যবসায়িক লোন: ১২% – ১৩%
- বিশেষ সুবিধা: ডাচ-বাংলা ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ঋণ পরিষেবায় কম সুদের হার প্রদান করে, বিশেষ করে হোম লোনে।
কম সুদের লোনের জন্য ব্যাংক নির্বাচন করার সময় গ্রাহকদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
- ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ: সুদের হার এই দুটি ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করতে পারে।
- ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থান: আপনার ক্রেডিট স্কোর এবং অন্যান্য আর্থিক শর্তও সুদের হারে প্রভাব ফেলতে পারে।
- বিশেষ ক্যাম্পেইন ও অফার: কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে বা ক্যাম্পেইনে কম সুদে ঋণ প্রদান করে।
তবে, যেকোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার, শর্তাবলী এবং অন্যান্য খরচ সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য নেওয়া জরুরি।
ঋণ গ্রহণের পূর্বে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত
ঋণ গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্ত, যা আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিস্থিতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যাতে আপনি সঠিক ব্যাংক বা ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে পারেন এবং ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো আর্থিক চাপ না পড়েন। নিচে ঋণ নেওয়ার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো:
১. ঋণের পরিমাণ এবং প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ
- ঋণ নেওয়ার আগে, আপনি কত পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করুন। অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ পরবর্তীতে তা পরিশোধে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- ঋণের উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে জানুন: আপনি কি হোম লোন, পার্সোনাল লোন, ব্যবসায়িক লোন, বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঋণ নিচ্ছেন?
২. সুদের হার
- সুদের হার হল ঋণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ঋণের মোট পরিমাণের ওপর প্রভাব ফেলে। কম সুদের হারে ঋণ নেওয়া সব সময় লাভজনক।
- ব্যাংকগুলোর সুদের হার নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা করুন এবং কোন ব্যাংক আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কম সুদে ঋণ প্রদান করছে তা নিশ্চিত করুন।
- এছাড়াও, সুদের হার ফিক্সড নাকি ভ্যারিয়েবল তা জানুন, কারণ ভ্যারিয়েবল সুদের হার বাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
৩. ঋণের মেয়াদ (Tenure)
- ঋণের মেয়াদ বা সময়সীমা আপনাকে ঋণ পরিশোধের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়। মেয়াদ কম হলে কিস্তি বেশি হবে, তবে সুদের পরিমাণ কম হবে। দীর্ঘমেয়াদী ঋণে কিস্তি কম হয়, কিন্তু মোট সুদ বেশি পরিশোধ করতে হয়।
- আপনার মাসিক বাজেট এবং আয় অনুযায়ী ঋণের মেয়াদ নির্ধারণ করুন। খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ নিলে দীর্ঘমেয়াদে বেশি সুদ দিতে হবে।
৪. ঋণের শর্তাবলী ও ফি
- ঋণ গ্রহণের শর্তাবলী এবং অতিরিক্ত ফি (যেমন, প্রোসেসিং ফি, লেট ফি, ডকুমেন্টেশন চার্জ) সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। এই ফি গুলি ঋণের মোট পরিমাণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- কিছু ব্যাংক ঋণের প্রাথমিক শর্ত হিসাবে জামানত চায়। জামানতের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝে নিন।
৫. ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা
- ঋণ নেওয়ার আগে, পরিশোধের একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন। ঋণের কিস্তি আপনি কীভাবে পরিশোধ করবেন, আপনার মাসিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব করা জরুরি।
- নিশ্চিত করুন যে, আপনার মাসিক আয়ের সাথে ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ সামলানো সম্ভব।
৬. ক্রেডিট স্কোর
- ঋণ গ্রহণের জন্য আপনার ক্রেডিট স্কোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। ব্যাংক বা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণত আপনার ক্রেডিট স্কোর চেক করে, যা আপনার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা সম্পর্কে একটি ইঙ্গিত দেয়।
- আপনার ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকলে কম সুদের হারে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি স্কোর কম হয়, তবে সুদের হার বেশি হতে পারে অথবা ঋণ নাকচও হতে পারে।
৭. জামানত বা গ্যারান্টি
- কিছু ঋণ, বিশেষত ব্যবসায়িক বা হোম লোন, জামানত বা গ্যারান্টি চেয়ে থাকে। জামানত হিসেবে আপনার বাড়ি, গাড়ি বা অন্য কোনো সম্পত্তি রাখা হতে পারে।
- জামানত ছাড়াই ঋণ নেয়ার সুযোগ থাকলে, তা অবশ্যই সঠিকভাবে যাচাই করে নিন।
৮. ঋণগ্রহীতা এবং ব্যাংকের সম্পর্ক
- যদি আপনি ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক হন, তবে অনেক ব্যাংক আপনাকে কম সুদের হার এবং সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে। ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
- ব্যাংকের গ্রাহক সেবা এবং তাদের ঋণ নীতিও আপনার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
৯. ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুবিধা
- ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে যদি কোনো ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে (যেমন, পূর্ববর্তী কিস্তি আগে পরিশোধ করা, কিস্তি পরিবর্তন করা), তবে তা আপনার জন্য উপকারী হতে পারে।
- অনেক ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য অনলাইন পেমেন্ট এবং অটো ডেবিট সুবিধা প্রদান করে, যা কিস্তি পরিশোধের কাজকে সহজ করে তোলে।
১০. বিকল্প ঋণগ্রহণের সুযোগ
- কিছু সময় ঋণ নেওয়ার পরে আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসতে পারে, যেমন চাকরি পরিবর্তন বা আয় কমে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের শর্তাবলী এবং পেমেন্ট পর্যালোচনা করে বিকল্প ঋণগ্রহণের সুযোগ (যেমন, ঋণ পুনর্গঠন বা পুনঃঅর্থায়ন) সম্পর্কে ভাবুন।
ঋণ গ্রহণের পূর্বে উপরোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে, আপনি সঠিকভাবে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ একবার ঋণ গ্রহণ করলে তা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
লোনের সুদ কমানোর কৌশল
লোনের সুদ কমানোর জন্য কিছু কার্যকর কৌশল রয়েছে, যা আপনাকে কম সুদের হার পরিশোধ করতে সহায়তা করতে পারে। ঋণ গ্রহণের পর থেকে সুদের পরিমাণ কমানোর জন্য কিছু কৌশল গ্রহণ করলে আপনার আর্থিক চাপ হ্রাস পাবে। নিচে কিছু কার্যকর কৌশল দেওয়া হলো:
১. সেরা সুদের হার বিশ্লেষণ এবং তুলনা করুন
- বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সুদের হার তুলনা করুন। এক ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন এবং অন্য ব্যাংক থেকে ঋণের শর্তাবলী এবং সুদের হার যাচাই করতে পারেন।
- অফার এবং প্রমোশনের সুযোগ: অনেক ব্যাংক ঋণের জন্য বিশেষ অফার দিয়ে থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এমন অফার খুঁজুন যা কম সুদের সাথে আরও সুবিধা প্রদান করে।
২. ক্রেডিট স্কোর উন্নত করুন
- আপনার ক্রেডিট স্কোর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। ভালো ক্রেডিট স্কোর (৬৯০ বা তার উপরে) থাকলে কম সুদের হার পেতে পারেন।
- ক্রেডিট স্কোর বাড়ানোর জন্য আপনার ঋণ পরিশোধ সময়মতো করুন, কার্ড বিলগুলো পরিশোধ করুন এবং যদি কোনো অতিরিক্ত ঋণ বা বকেয়া থাকে তা মেটান।
৩. ঋণের মেয়াদ কমান
- যদি সম্ভব হয়, ঋণের মেয়াদ কমিয়ে দিন। সাধারণত, ঋণের মেয়াদ কম হলে প্রতি মাসে কিস্তির পরিমাণ বেশি হয়, তবে মোট সুদ কম পরিশোধ করতে হয়।
- তবে, এটি করার আগে আপনার মাসিক বাজেট এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব করে দেখুন যে, কিস্তি বাড়ানোর ফলে আপনাকে কোনো আর্থিক চাপ পড়বে কি না।
৪. ঋণের পরিশোধ আগে করতে চেষ্টা করুন
- যদি আপনার কাছে অতিরিক্ত অর্থ থাকে, তাহলে ঋণের অতিরিক্ত পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। এতে আপনি সুদের পরিমাণ কমাতে পারবেন। বিশেষত, দীর্ঘমেয়াদী ঋণগুলির ক্ষেত্রে আগেভাগে পরিশোধ করলে সুদ কমানো সম্ভব।
- অনেক ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাকে অতিরিক্ত পরিশোধের সুবিধা দেয় এবং এতে অতিরিক্ত সুদ কমে।
৫. ঋণ পুনঃঅর্থায়ন (Refinance) করুন
- ঋণ পুনঃঅর্থায়ন একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে, বিশেষত যদি আপনি বেশি সুদের হারে ঋণ নিয়ে থাকেন। পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে আপনার ঋণকে নতুন শর্তে পুনঃতহবিল করা যায়, যার ফলে আপনি কম সুদের হার পেতে পারেন।
- এই কৌশলটি তখন সবচেয়ে কার্যকর যখন বাজারে সুদের হার কমে আসে অথবা আপনি আরো ভালো ক্রেডিট স্কোর অর্জন করেছেন।
৬. ফিক্সড সুদের হার নিন
- যদি আপনার ঋণের সুদের হার ভ্যারিয়েবল (পরিবর্তনশীল) হয়, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী ঋণে বেশ ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ সুদ পরিবর্তন হতে পারে। এ কারণে আপনি ফিক্সড সুদের হার নির্বাচন করতে পারেন, যাতে সুদের পরিমাণ পুরো ঋণের মেয়াদে একই থাকে।
- এটি দীর্ঘমেয়াদে আপনার আর্থিক পরিকল্পনা আরও সুরক্ষিত করবে এবং আপনি জানবেন কতটুকু সুদ পরিশোধ করতে হবে।
৭. ঋণের জামানত দিন
- কিছু ঋণের জন্য জামানত প্রদান করলে ব্যাংক কম সুদের হার দিতে পারে। যদি আপনি গ্যারান্টি বা জামানত প্রদান করেন (যেমন, বাড়ি, গাড়ি বা অন্য কোনো সম্পত্তি), তবে এটি ব্যাংককে নিশ্চিত করবে যে আপনি ঋণটি পরিশোধ করবেন এবং ব্যাংক কম সুদের হারে ঋণ প্রদান করতে রাজি হতে পারে।
৮. অটোমেটিক পেমেন্টে সাবস্ক্রাইব করুন
- কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য অটোমেটিক পেমেন্ট সুবিধা প্রদান করে। এই সুবিধা গ্রহণ করলে আপনার ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ হয় এবং আপনি ডেলি ফি বা পেনাল্টি থেকে বাঁচতে পারেন।
- নিয়মিত এবং সময়মতো পেমেন্ট করলে সুদের হার কমানোর জন্য আপনি ব্যাংক থেকে বিশেষ সুযোগ বা ছাড়ও পেতে পারেন।
৯. ঋণের পরিমাণ কমাতে জোগান দিন
- যদি সম্ভব হয়, আপনার ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য কিছু অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় করুন। যদি আপনি বড় পরিমাণে জামানত বা অতিরিক্ত পেমেন্ট করেন, তবে আপনি সুদ কমাতে সক্ষম হবেন।
- একবারে বেশি অর্থ পরিশোধ করার চেষ্টা করুন, কারণ এতে প্রাথমিক মূলধনের ওপর সুদের পরিমাণ কমবে।
১০. অতিরিক্ত ঋণ গ্রহন থেকে বিরত থাকুন
- একাধিক ঋণ গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনি পুরো ঋণের সুদ বেড়ে যেতে পারেন। সম্ভব হলে, যে ঋণটি সবচেয়ে বেশি সুদ নেয় তা আগে পরিশোধ করুন।
- ঋণ পরিশোধের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করুন, যাতে আপনি অতিরিক্ত ঋণগ্রহণ বা অপচয় থেকে বিরত থাকতে পারেন।
ঋণের সুদ কমানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। যদি আপনি সুদের হার কমাতে চান, তবে ঋণের শর্তাবলী, সুদের হার, ঋণ পরিশোধের কৌশল এবং আপনার আর্থিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। ঋণ নেয়ার আগে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করা এবং সুদের হার কমানোর কৌশল প্রয়োগ করা আপনাকে আর্থিক সংকট থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।
ঋণ গ্রহণ এবং তার সুদ পরিশোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বিষয়, যা ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সুদের হার এবং ঋণের শর্তাবলী বিভিন্ন ব্যাংক ও ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা ভিন্ন হতে পারে, তাই ঋণ নেওয়ার পূর্বে সুদ কমানোর কৌশলগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সুদের হার কমানোর কৌশল হিসেবে ঋণের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা, ক্রেডিট স্কোর উন্নত করা, ঋণের মেয়াদ কমানো, জামানত প্রদান এবং ঋণ পুনঃঅর্থায়ন করা যেমন কার্যকর কৌশল হতে পারে, তেমনি সুদের হার ও ঋণ শর্তাবলী নিয়ে সুক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং তুলনা করাও অপরিহার্য।
ঋণের পরিশোধে সময়মতো পেমেন্ট, অটোমেটিক পেমেন্ট সুবিধা গ্রহণ এবং অতিরিক্ত পরিশোধের মাধ্যমে আপনি আপনার ঋণের সুদ কমাতে পারবেন। সবশেষে, সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা এবং সুদ কমানোর কৌশল অনুসরণ করলে আপনি আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন এবং ঋণের বোঝা কমিয়ে আনতে পারবেন।
ঋণ একটি উপকারী আর্থিক সেবা হতে পারে, তবে এটি পরিশোধের জন্য সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। সঠিক সময়ে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ঋণ গ্রহণ করলে তা আপনার আর্থিক ভবিষ্যতকে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে।
ঋণ নেওয়ার আগে অতিরিক্ত টিপস
ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ অনুসরণ করলে আপনি আরও সচেতন এবং সঠিকভাবে ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:
১. ঋণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করুন
- ঋণ নেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্য কি? যদি এটি বিস্তারিত পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয়তা না থাকে, তাহলে ঋণ গ্রহণের থেকে বিরত থাকা ভালো। নিশ্চিত করুন যে ঋণটি একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ ও লাভজনক বিনিয়োগে ব্যবহৃত হবে, যেমন বাড়ি কেনা, ব্যবসা শুরু করা, বা শিক্ষা সংক্রান্ত খরচ।
২. ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই করুন
- ঋণ গ্রহণের পূর্বে আপনার মাসিক আয়ের সঙ্গে ঋণের কিস্তি এবং অন্যান্য আর্থিক দায়দায়িত্বের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করুন। এটি নিশ্চিত করার জন্য আপনি একটি বাজেট তৈরি করুন এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করুন। অতিরিক্ত ঋণগ্রহণের মাধ্যমে আপনার দৈনন্দিন খরচে চাপ বাড়াতে হতে পারে।
৩. ঋণের শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ুন
- ঋণ নেওয়ার আগে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ুন। সুদের হার, প্রক্রিয়াগত ফি, জামানত বা গ্যারান্টি সম্পর্কিত শর্তগুলি সম্পর্কে অবগত থাকুন। এছাড়া, কিস্তি পরিশোধের জন্য যদি কোনো পেনাল্টি বা অতিরিক্ত ফি থাকে, তাহলে তা জানুন।
৪. ঋণের মেয়াদ নির্ধারণে সতর্ক থাকুন
- ঋণের মেয়াদ কম থাকলে প্রতি মাসে কিস্তির পরিমাণ বেশি হলেও সুদের পরিমাণ কম হবে, আর যদি ঋণের মেয়াদ বেশি হয়, তবে কিস্তি কম হবে কিন্তু মোট সুদ বেশি পরিশোধ করতে হবে। তাই, নিজের আর্থিক সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ঋণের মেয়াদ নির্বাচন করুন।
৫. সুদের হার ও অন্যান্য ফি তুলনা করুন
- বিভিন্ন ব্যাংক বা ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সুদের হার ও ফি তুলনা করুন। কিছু ব্যাংক বিশেষ অফার প্রদান করে, বিশেষত নির্দিষ্ট সময়ে বা বিশেষ ক্যাম্পেইনে। সুতরাং, সেরা অফার বেছে নিতে বিভিন্ন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
৬. ক্রেডিট স্কোর চেক করুন
- ঋণ গ্রহণের পূর্বে আপনার ক্রেডিট স্কোর যাচাই করুন। ভালো ক্রেডিট স্কোর থাকলে আপনি কম সুদে ঋণ পেতে পারেন। যদি আপনার ক্রেডিট স্কোর দুর্বল থাকে, তবে এটি উন্নত করতে কিছু সময় নিন এবং পরে ঋণ নিন। এছাড়া, কিছু ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণের আবেদন করার আগে ক্রেডিট স্কোর চেক করে থাকে।
৭. ঋণের বিকল্প ভাবুন
- ঋণ নেওয়ার আগে, আপনার কাছে ঋণের বিকল্প কোনও উপায় আছে কিনা তা ভাবুন। যদি সম্ভব হয়, সঞ্চয় থেকে অর্থ তুলতে পারেন বা বন্ধু বা পরিবারের সাহায্য নিতে পারেন, যা আপনাকে সুদ পরিশোধ থেকে মুক্তি দিতে পারে। এছাড়া, কিছু পরিস্থিতিতে গ্রান্ট বা বৃত্তি (যদি শিক্ষা বা গবেষণা সংক্রান্ত ঋণ হয়) পেতে পারেন।
৮. ঋণ পুনঃঅর্থায়ন (Refinancing) এর অপশন দেখে নিন
- যদি আপনি একটি উচ্চ সুদের হারে ঋণ নিয়ে থাকেন, তবে ঋণ পুনঃঅর্থায়ন (Refinance) করার অপশন দেখুন। নতুন ঋণগ্রহণের মাধ্যমে আপনি পুরানো ঋণ বন্ধ করে কম সুদের হার পেতে পারেন। তবে, এ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া এবং খরচ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
৯. ঋণ পরিশোধের সময়কাল নির্ধারণ করুন
- ঋণের পেমেন্ট স্কিম নির্বাচন করার সময় সময়সীমা এবং কিস্তি পরিশোধের শর্তাবলী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন। আপনার আয় অনুযায়ী ঋণের সময়সীমা নির্বাচন করুন, যাতে পরিশোধের চাপ বেশি না হয়।
১০. ঋণের আগাম পরিশোধের শর্ত দেখুন
- কিছু ব্যাংক বা ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ আগাম পরিশোধ করলে অতিরিক্ত ফি বা পেনাল্টি নিতে পারে। আগাম পরিশোধের শর্তগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানুন এবং এই শর্তগুলো আপনার পরিকল্পনায় কোন প্রভাব ফেলবে কিনা তা বিবেচনা করুন।
১১. ঋণের পরিমাণ সীমিত করুন
- কখনও কখনও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ঋণ নেয়া বা ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সহজ হয়ে যায়। তবে, ঋণ গ্রহণের পরিমাণ যত বেশি হবে, সুদের পরিমাণও তত বেশি হবে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ নিন এবং অতিরিক্ত চাপ থেকে বাঁচুন।
১২. ঋণের প্রক্রিয়া এবং সময়সূচী জানুন
- ঋণ আবেদন করার পর প্রক্রিয়া এবং সময়সীমা জানুন। কিছু ঋণ দ্রুত পরিশোধ হতে পারে, কিন্তু কিছু ঋণের জন্য দীর্ঘ সময় লাগে। আপনি যে ঋণটি নেবেন, সেটির আবেদন প্রক্রিয়া এবং অনুমোদন সময় জানুন, যাতে আপনি প্রস্তুত থাকতে পারেন।
Share this content: